শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ০৫:০৬ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে চলমান লকডাউনে আয়-রোজগার বন্ধ থাকলেও জেলায় তেমন কোনো সাহায্য পাচ্ছে না নিম্ন আয়ের মানুষরা। আগের মতো কেউ খোঁজখবরও নিচ্ছেন না তাদের। গত বছরের মার্চে লকডাউন শুরুর পর সংকটে পড়া মানুষদের খাদ্যসামগ্রী ও নগদ টাকা দিয়ে সহায়তা করতে নানা সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে তৎপরতা জেলার চারিদিকে দেখা গিয়েছিল। সরকারি তৎপরতাও ছিল বেশ। রাস্তার ধারে, ফুটপাতে বসে থেকেও সহায়তা পেয়েছিল এসব মানুষ। এবার তাদের সাহায্যে কোনো তৎপরতাই দেখা যাচ্ছে না। খাবারের অভাবে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনযাপন করছেন এসব অসহায় মানুষ। সরকার প্রসাসনের মাধ্যমে কিছুটা মানুষের পাশে দাঁড়ালেও কঠোর শাটডাউনের বন্দিদশা মানুষের দৌড়গোড়ায় যৎসামন্য। এছাড়াও বিত্তবানরা এখনো ‘পকেট’ খুলেননি। এদিকে মৌলভীবাজারে বাহাড়ী নামীয় সামাজিক ৭২ নামীয় সংগঠনসহ শতাধিক সংগঠন ও রাজনিতিবিদরা রয়েছেন মাহা বিপর্যয়ের মাজে অন্তআড়ালে। তবে তাদের খাবার দিতে যারা গতবার মাঠে নেমেছিলেন, সেই স্বেচ্ছাসেবীরা বলছেন- নানা জনের অর্থ সহায়তা নিয়ে কাজ করেন তারা। কিন্তু এবার সহায়তা তেমন মিলছে না। মহামারী দীর্ঘায়িত হওয়ায় নিম্ন মধ্যবিত্ত পেরিয়ে এখন মধ্যবিত্তের সংসারেও ধাক্কা লেগেছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে- মহামারীর কারণে বাংলাদেশের ৭৭ শতাংশ পরিবারে গড় মাসিক আয় কমেছে, আর ৩১ শতাংশ পরিবারে ঋণ বেড়ে গেছে। অনেকের জীবনেই এখন সংকট নেমেছে, যার প্রভাবে টান পড়েছে স্বেচ্ছাসেবীদের তহবিলে। সরকারের পক্ষ থেকে সারা দেশে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মানবিক সহায়তা দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। গেলেও কীভাবে পেতে হয় তাও জানে না অসহায় মানুষদের অনেকেই। গত ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয় বিধিনিষেধের নামে লকডাউন। কয়েকদফা এই বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়ালেও তাতে করোনা সংক্রমণ কমেনি। এর পর গত ১ জুলাই থেকে সারা দেশে একযোগে চলছে কঠোর লকডাউন। এতে সরকারি-বেসরকারি অফিস, মার্কেট বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে দিনমজুর ও ভাসমান মানুষরা। দিন মজুর কুদ্দুস মিয়া দৈনিক মৌমাছি কন্ঠকে বলেন- ‘কাম-কাজ নাই, খামু কী ?। রাজ মিস্ত্রি রাজু জানান, সে দীর্ঘদিন ধরে রাজ মিস্ত্রির কাজ করতেন। এই লকডাউনের আগে কয়েকদিন কাজ করেছিল। বর্তমানে তার কোনো কাজ নেই। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কষ্টের মধ্যে দিন কাটছে। পথের ধারে বসে থাকতে দেখা যায় ৫-৭ জন মহিলাকে। তাদের মধ্যে একজনের নাম রোজিনা আক্তার। তিনি বলেন- ‘আগে বাসা-বাড়িতে কাজ করতাম। বেশ কয়েক মাস ধরে সেই কাজটাও নাই। বাড়ির মালিক করোনার ভয়ে কাজ বাদ দিয়েছেন। আসলে আমাদের কষ্ট কেউ দেখে না। আগে এখানে বসলে অনেকেই খাবার দিত, টাকা দিত, এখন কেউ দেয় না। ভ্যানচালক জলিল বলেন, এক বছর আগের কথা, করোনা ভাইরাস মহামারীর শুরু, তখন অনেকেই এখানে এসে চাল-ডাল, বাচ্চাদের খাবার দিয়ে গিয়েছিলেন। বছর গড়িয়ে আবার চলছে এখন লকডাউন। কিন্তু এবার তেমন করে কেউ আসেনি। গতবার বিভিন্ন এনজিও ত্রাণ ও নগদ সাহায্য নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল। এবার এনজিওগুলো এখনো ত্রাণ বিতরণ শুরু করেনি।